পাইরেসির কবলে পড়েছে আলোচিত চলচ্চিত্র ‘রেহানা মরিয়ম নূর’

রেহানা মরিয়ম নূর নামটি সিনেমা প্রেমীদের কাছে অপরিচিত নয়। কানের উৎসবের পথচলা এখনও তাজা স্মৃতি। ২০২১ সালে নির্মিত চলচ্চিত্র রেহানা মরিয়ম নূর পরিচালনা করেছেন আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ এবং প্রটোকল ও মেট্রোর ব্যানারে প্রযোজনা করেছেন জেরেমি চুয়া এছাড়াও সহ-প্রযোজনা করেছে সেন্সমেকারস প্রোডাকশন। ২০২১ সালে এ চলচ্চিত্রটি ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসব আসরের আঁ সের্ত্যাঁ রেগার বিভাগে নির্বাচিত হয়। এর নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন আজমেরি হক বাঁধন। সাদ এবং তাঁর টিমের সাফল্যে আনন্দিত যখন পুরো দেশ ঠিক তখনই শোনা যায় রেহানা মরিয়ম নূর পাইরেসির মত নোংরা কাজের কবলে পড়েছে। যদিও বিষয়টি প্রকাশ হতেই সংশ্লিষ্টরা আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।
গুলশান থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে পাইরেসির সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে শনাক্ত করা গিয়েছে। ডিবি অফিস থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। রেহানা মরিয়ম নূর চলচ্চিত্র পাইরেসির সাথে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানা যায়।
এদিকে পাইরেসি ইস্যুকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন চলচ্চিত্র প্রেমীরা। কিছু মন্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলোঃ
“Rehana Maryam Noor এর ‘কান উৎসব’ সাফল্যের পর আমি ছবিটি দেখতে উদগ্রীব। মেলবোর্ন ফ্লিম ফেস্টিভালের অনলাইন স্ক্রিনিং থেকে ছবিটি পাইরেসির শিকার হয়েছে। বিষয়টি ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত হোক আমি পাইরেটেড ছবি দেখবো না, বন্ধু তালিকার অন্যদেরও এটি থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি!” – Mazharul Kabir Shayon।
“আমার বন্ধুতালিকার অনেক সচেতন এবং বড় বড় নীতিবাক্য বলা মানুষজনকে দেখছি Rehana Maryam Noor এর পাইরেটেড সংস্করণ দেখে ফেলছেন! সবাইকে চিনে রাখলাম।” – মেহের আফরোজ শাওন, অভিনেত্রী, গায়িকা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা।
“আমার খুবই কষ্ট লাগছে, রাগ হচ্ছে । বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্মান বয়ে আনা ফিল্ম “রেহানা মরিয়ম নূর” এর পাইরেট কপি এখন এভেইলেবল টরেন্টে, ইভেন গুগল ড্রাইভে ইনবক্স থেকে ইনবক্সে ঘুরে বেড়াচ্ছে । আরো রাগের বিষয় হচ্ছে অনেকের সাথে এগুলো করছে ফিল্ম নিয়ে মোটামোটি জানা শোনা লোকজন । অনেক অপেক্ষায় ছিলাম “রেহানা মরিয়ম নূর” আমি সিনেমা হলে দেখবো । আরো ২০-৩০ জনকে নিয়ে উৎসব এর মতন করে ফিল্ম দেখবো । তা কি আদৌ আর হবে? জানি না ! আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে অসম্মানিত করতে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন । আমাদের বাইরের কারো ক্ষতির দরকার পড়ে না । আমরা নিজেরাই নিজেদের শত্রু । ফিল্মের মূল চরিত্রে অভিনয় করা আজমেরী হক বাঁধনের কাছ থেকে জানতে পারলাম ফিল্মের পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ ভাই প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছেন । সেটাই তো স্বাভাবিক । একটা ফিল্ম তো এমনি এমনি হয় না । এমন ফিল্ম তো আরো নয় । কি যে সাধনা, পরিশ্রম, কষ্ট, অর্থ আর ধৈর্য্যের পরীক্ষা একটা ফিল্মের পরিচালক এবং তাঁর টিমের উপর চলে তা যদি চোরেরা বুঝতো তথাকথিত জ্ঞান (পড়ুন অজ্ঞান) পাপীরা বুঝতো ! মানষিকভাবে কষ্ট পাচ্ছি । সাদ ভাইদের টিমের প্রতি আমার সমবেদনা । তাও অনুরোধ করবো দর্শকদের এই কপি না দেখার জন্য । পারলে লিংকগুলো ডাউন বা টেক ডাউন করার চেষ্টা যদি করা যায় অন্তত তবে ভালো হয় । গুগল ড্রাইভের লিংক গুলো জোগাড় করে এক্সপায়ায় করা গেলে আরো ভালো । জানি না তাতে কতটুকু কি হবে ! আমার শেষ কথা একটাই, এভাবে হলে ভালো ফিল্ম এই দেশে কিভাবে হবে !!!!” -মাবরুরর রশিদ বান্নাহ, নাট্য নির্মাতা।
“বাংলাদেশের জন্য ভীষণ সম্মান বয়ে এনেছে বাংলাদেশী সিনেমা Rehana Maryam Noor । বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব ‘কান চলচ্চিত্র উৎসবে’ ‘রেহেনা মরিয়ন নূর’ দারুন প্রশংসা পেয়েছে। কিন্তু একটি চক্র খুব বেশি অন্যায় করে ফেলেছে তরুণ নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ ও তার টিমের ওপর। অপেক্ষা করছিলাম কখন হলে মুক্তি পাবে। কিন্তু মুক্তির আগেই পাইরেসির শিকার হলো ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। পুরো সিনেমা ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছে একটি চক্র। গতকাল রাতে সেই সিনেমা হাতে পেলাম। কিন্তু অনেক কষ্টে লোভ সামলেছি। এখন পর্যন্ত দেখি নাই। টিকিট কেটে হলে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দেখবো। যারা এ কাজটি করেছেন তাদের বুঝা উচিত ছিল, একটি সিনেমা নির্মাণ মানে একটি স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা। সেখানে অনেকের শ্রম, মেধা, ইনভেস্ট থাকে। ইনভেস্ট না উঠাতে পারলে পরের সিনেমা কেমন করে নির্মাণ করবেন!!???” – Mahmudul Hasan Parvez।
পাইরেসির ঘটনায় ভীষণভাবে মর্মাহত হয়েছেন নির্মাতা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, অভিনেত্রী বাঁধনসহ সিনেমা সংশ্লিষ্ট সকলে। তাদের বিশ্বাস আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপরাধীরা শাস্তি পাবে এবং পাইরেসির মধ্য জঘন্য অপরাধ বন্ধ হবে।
পাইরেসি হলেও সাধারণ দর্শকরা সিনেমা হলে গিয়েই রেহানা মরিয়ম নূর এর মত আলোচিত সিনেমা দেখতে চান।